ŷ

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় উপন্যাসসমগ্র-১ম খণ্ড মানি� বন্দ্যোপাধ্যায় উপন্যাসসমগ্র-১ম খণ্ড question


3 views
মানি� বন্দ্যোপাধ্যায় এর উপন্যাসে সংসা� � বৈরাগ্�
Saiful Sourav Saiful Nov 24, 2018 10:45AM
Manik Bandopadhyay এর পুতুলনাচের ইতিকথা, জননী, দিবারাত্রি� কাব্�চতুষ্কোণ এর আলোক� একটি আলোচনা �



মানি� বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিছু উপন্যাসে যেমন প্রগাঢ় সংসা� ধর্ম রয়েছ�, তেমন� কিছু উপন্যাসে সংসা� ত্যাগী বৈরাগ্যে� ধরণও রয়েছ� � কিছু উপন্যা� মানুষক� কর� তোলে বিজ্ঞা� সচেত� সামাজি� মানু� � আর কিছু কর� খেয়ালী � ক্ষ্যাপাটে আপ� ভোলা দুরন্ত স্বভাবের �

'পুতু� নাচে� ইতিকথা' সমাজবদ্ধ সাংসারিক মানুষে� জাগতিক টানাপোড়ে� � চরিত্রদে� নিজেদে� প্রত� আবেগ-অনুভূতির প্রলেপ দিয়ে যে� এক পুতু� খেলা অবর্তীর্� করেছেন লেখক � শশী ডাক্তা� � কুসুমে� মধ্যকা� অপত্� আকর্ষণ বারবার তাদে� কাছে এন� মন� করিয়� দে� আশপাশে� জনবহুল উপস্থিতি � কুমু� � মতির অদূরদর্শী প্রণ� তাদে� ফেলে দে� এক অপরিণামদর্শী ভোগান্তি� জীবন� � বারবার এস� ফিরে যাওয়� কুসুমক� তা� শশী ডাক্তা� বলেই ফেলে�- 'কুসু�, তোমা� মন না�?' � যে� যথেষ্ট মনের অনুপুস্থিতিই কুসুমে� শরীরক� কাছে এন� ফিরিয়ে নিয়ে যা� কুসু� নিজে� �

'সংস্কৃতি� ভাঙা সেতু' গ্রন্থ� সংকলিত 'মানি� বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাগী চোখে� স্বপ্ন' প্রবন্ধে লেখক আখতারুজ্জামা� ইলিয়াস মানিকে� বিজ্ঞা� চেতন� � উপনিবে� কালে� শ্রেণী শাসি� শরীরে� নৃতাত্ত্বি� রূপরেখ� নিয়ে আলোকপা� করেছেন � তিনি দেখানঃ মানি� কখনো� মনকে বা� দিয়ে শরীরে� কথ� ভাবে� না; প্রয়োজনে চরিত্রকে উপোস করিয়� সংসারহী� কর� দে� � কিন্তু সিভিলিযেশনের প্রক্রিয়ায় ইতিহাসের প্রতিট� বাঁক� মানুষে� শরী� কাঠামো � তা� ভাষাকে শাসন কর� এসেছ� � পরাধী� জাতি� এক� মানুষে� শরীরবৃত্তী� বৈশিষ্ট্� তা� স্বাধী� জাতি� ব্যক্ত� মানুষে� চেয়ে ঢে� গু� আত্মপ্রবঞ্চক � আর যদ� সমাজ ব্যবস্থাটি হয় ধর্ম শাসি�, তাহল� ব্যক্তির শরী� তা� নিজে� কাছে� হয়� ওঠ� অবোধ্য কুহক � ইলিয়াস এই সমস্� বিশে� বিশে� পরিস্থিতিত� মানিকে� প্রেসকিপশন- বিজ্ঞা� বা চিকিৎস� বিজ্ঞানে� শরণাপন্ন হওয়া এব� শরীরে� প্রকৃত� � ধরণক� আবিষ্কার করার পরামর্� দে� �

‘জীবনকে জানা আর জীবনকে মায়া কর� অঙ্গাঙ্গিভাব� জড়িয়ে আছ� � একটাকে বড� কর� অন্যটাকে তুচ্� কর� জীবনদর্শী� পক্ষ� বীভৎ� অপরা�'- এই কথাট� মানি� বন্দ্যোপাধ্যায় 'লেখকের কথ� � বাংল� প্রগতি সাহিত্যে� আত্মসমালোচনা' বইতে বলেছেন � চরিত্রের মূ�-কান্�-ফু�-ফলকে জেনে তা� সজীবত� � নির্জীবত� অবলোকন কর� যে লেখক তা� প্রত� প্রয়োজনী� মায়া অর্প� করতে পারে� না, মানিকে� মত� সে� জীবনদর্শী লেখক বীভৎ� অপরা� কর� থাকে� � এব� এক� দর্শ� যে কো� মানুষে� জীবনের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য � এই জীবনকে জানা � জীবনকে মায়া করার অঙ্গাঙ্গিভাব� জড়িয়� থাকা� মধ্যেই মানিকে� বিজ্ঞা� মনস্� সংসারধর্� নিহি� রয়েছ� � উদ্ভ্রান্ত কুমু� ভালোবেসে সরলমতি মতিক� বিয়ে করলে� অধিকাং� সম� শহরে পড়� থাকে এব� অপরদিক� মত� টলোমলো আঁখিতে সারাদি� যে� কা� পথ পানে চেয়ে আশায় আশায় থাকে � কুমু� যে� মতির সাথে আর কুসু� যে� শশী� সাথে জীবনকে মায়া না কর� পরাধী� শাসি� শরী� নিয়ে আত্মপ্রবঞ্চন� কর� সে� বীভৎ� অপরাধটিই কর� � আর সে� সমস্� ব্যক্ত� প্রবঞ্চন� দেখে মানিকে� রাগী চো� সংযত হয়� সমাজবদ্ধ মানুষে� সংকটের প্রত� বিজ্ঞানে� ছো�-বড় মুক্তিকে উপস্থাপন করেন কারণ হেমিংয়ের একটা দার্শনিক উক্ত� মানি� জেনে হো� বা না জেনে, অবশ্যই ধারণ করেন� 'লেখক হিসেবে আপনা� বিচা� কর� উচিৎ নয়, বুঝত� পারা উচিৎ' � দুঃখজন� হলেও সত্য, বিগত বে� কিছু দশ� যাবত সোনা� বাংলার বহ� নামধারী � জনপ্রি� লেখকরা সমাজ, ধর্ম � ব্যক্ত� মানুষে� সংকটকে না বুঝত� চেষ্টা কর� বিচা� কর� বা আঘাত কর� বিষবাষ্প সৃষ্টি করেছেন (সে আলোচনা অন্য তব� গুরুত্বপূর্ণ) �

'জননী' উপন্যাসে দেখা যা� অফিস� চুরি� দায়ে কয়েদী স্বামী� অনুপুস্থিতিত� অকুল পাথারে পতিত হয়েও একজন মা তা� সন্তানদে� কিভাবে আগলে রাখে� � হুমায়ু� আহমে� বলেন শুধুমাত্� 'জননী' উপন্যাসট� লিখত� পারলেই তিনি নিজেকে সার্থক মন� করতে� � এত� শত-শত বইয়ে� রচয়িতা কে� মাত্� একটা উপন্যাসে� দিকে এম� নির্দে� করলে�? এক� বল� শিল্পী� অল্টার-ইগ� � ব্যাপ্তি � বিস্তৃতি ছাড়া� 'জননী' উপন্যাসে� মায়াময়-ছায়াময় ভাষা � শৈলী যে অনন্� উচ্চতা� নিয়ে গেছে এই উপন্যাসক�, সে� শিল্পে� উচ্চতা ছি� হুমায়ু� আহমেদে� অভিপ্স� � দরিদ্রতা, জরাক্লীষ্টতায় পীড়ি� মায়ে� সংগ্রামে� অবর্ণনী� বর্ণনা উপন্যাসে সংসারে� মূ� হয়� কিভাবে ঝড়-ঝাপটায় তা� শাখা-প্রশাখাক� ধর� রাখে� তা পাঠককে হৃদয়গ্রাহী কর� তোলে �

'চতুষ্কোণ' উপন্যাসে এক� চল� ফেরা 'রাজকুমার' এর দৈনন্দিন জীবন� তা� প্রে�-অপ্রেমের বর্ণনা আস� � বই-পত্র, বিছানা আর প্রয়োজনী� পোষা� � আসবা� ঘর� � রাজকুমারের কো� একদি� মাথা ধর� � কো� একদি� সে রিনিদে� বাড়ি যা� � রিনি পিয়ানোতে গা� কর� আর রাজকুমারকে দেখে� না দেখা� ভা� কর� � রিনি� বাবা উকিল, রাজকুমার তা� সাথে আলাপ কর� ফিরে যা� � রিনি� সাথে লেনাদেনা� বনিবনা হয়না দু'জনের জীবনদর্শনে� ফারাকে� কারণ� � বিকালে মাধবীকে পড়াত� যা� � রাজকুমারের প্রত� মাধবী� অবাধ ভক্ত� দেখে তা� চোখে গভী� হয় সংশয় � শিক্ষকের কর্তব্� যে� তাকে সচকি� কর� রাখে মাধবী� সন্মূখ� � কোনদিন সন্ধ্যায় হয়� সারসী� সাথে দেখা হয় � সারসী সংস্কা� মুক্�, আধুনিক�, সমাজ � রাজনীতি বিষয়� মাঠকর্মী � রাজকুমারের সাথে অনেক কথ� চলতে থাকে, বন্ধুত্বপূর্� কথ� বলতে থাকে কিন্তু কোথা� যে� তাদে� একটা সু� কাটা পড়� � আর কালী থাকে অন্তর্মুখী হয়� � নিম্নবর্� থেকে উঠ� আস� সামাজিকভাব� অবহেলি� মেয়ে কালী� আস�-যাওয়�, তটস্থত� যে� সমাজের চিরায়ত তেলে আর জল� মিশত� না পারা� গোঁড়� সংস্কা� � এক-আধবা� রাজকুমারকে উপেক্ষাকারী মন� হলেও নারীদে� সাথে কথাবার্তায় তা� হৃদয়ের উপস্থিতি � তা� আবেগকে উপস্থাপন করলে মন� হয় রাজকুমার� তৎসময়ে পুরো আধুনিক একজন � উপন্যাসে দেখি প্রত্যেকটা চরিত্রের সাথে আলাদ� সম্পর্� বা সম্পর্কহী� সূক্ষ্� টেনশ� � বহুদিন রিনি� ফিরিয়ে দেবা� পর সে সূত্রে শেষদিক� হয়� রিনি� চুম্বন অনায়াস� ফিরিয়ে দে� সে � মাধবীকে পড়াত� গিয়ে যে বিব্রতির সৃষ্টি হয় তা সহ� করতে পারে না � সারসী কাজে-কর্ম� বরাবরই উদ্যমী এব� অধরা এক প্রকৃত সারস � কালী� আর্থসামাজি� পরিণতি তাদে� সম্পর্কক� অপরিণত� কর� রাখে � উপন্যা� শে� হলেও মন� হয় আরেকটু হল� ভালো হত � জানা� ইচ্ছ� থেকে যা� শে� পর্যন্� রাজকুমার কা� কাছে নিজেকে সমর্পণ কর� � ব্যক্তিগ� আকর্ষণ � সংঘর্ষ� অপরিণত সব সম্পর্কক� নিরূপণ করতে গিয়ে উপন্যাসি� চরিত্রদে� পরিপার্শ্বকে তুলে ধরেন এব� তাদে� চারিত্রি� বৈশিষ্ট্যে তা� প্রভাব বা প্রাদুর্ভা� লক্ষ্য করেন � রাজকুমার হয়তো পরবর্তীতে সাংসারিক হয়, হয়তো হয় না � কিন্তু তা� এই সমাজবদ্ধ অপরিণত প্রেমগুলোত� খাবি খেয়ে বেড়ানো কি সমাজের� সৃষ্� ব্যক্ত� সংকট নয় যেখানে মানু� অধিক যান্ত্রি�, অনধি� বিজ্ঞা� সচেত�?

'দিবারাত্রি� কাব্�' উপন্যাসে 'হেরম্ব' যে� বারবার ফিরে আস� ফিরে যা�, ধর� নাহি দেবো হা� ধরণে� এক প্রেমি� চরিত্র � যৌবন� নিজে� প্রেমিকা 'সুপ্রিয়া'কে অভিবাব� সেজে বিয়ে দিয়ে দে� হেরম্ব নিজে � আবার অনেক বছ� পর� দেখা করতে গিয়ে দেখা যা� হেরম্বের প্রত� সুপ্রিয়া� প্রেমে� দাবী ভয়াব� ভাবে ফুটে উঠেছ� � যদিও স্বামী সংসারে অভ্যস্� সুপ্রিয়া কিন্তু পুরোনো অপূর্ণ প্রেমে� জাগর� বারবার হেরম্বকে পা চালিয়ে নিয়ে চল� সুপ্রিয়া� বাড়িতে � কিন্তু এক� সময়ে কঠিন হৃদয়ের অধিকারী প্রৌ� হেরম্ব এক তরুণী বালিকা 'আনন্�'� প্রেমে মজ� ওঠ� � হেরম্ব এক দোলাচলের সাগর� পড়� উভয়ক� দেখা দিয়ে যেতে থাকে � তব� চুড়ান্� প্রণ� অধরা� থেকে যা� এব� শে� দৃশ্যে আনন্দে� নিজে� গায়ে কেরোসি� ঢেলে অগ্নিসংযোগ যে� এক প্রতীকী দৃশ্যঃ প্রেমে� দাহন� পুড়ত� থেকা আত্মপ্রবঞ্চক শরী� � এই উপন্যাসক� সামাজি�-অসামাজিক কাঠামোবদ্ধতা� ন্যূ� আঙ্গুল তুলে অনেক� তিরষ্কার করেছিল গত শতকে� তিরিশে� দশকে � অথ� কাঠামো� বাহুল্� বিবর্জিত অন্যতর এক মনোপ্রবৃত্তি� দি� উন্মোচনে� সরূপ হিসেবে মেনে নিতে অতিবিজ্ঞ পাঠক-সমালোচকদের কয়েক দশ� লেগে গেলো �

লেখক যদ� উপন্যসের চরিত্রদে� প্রণ� ঘটিয়� দে� অথবা যদ� বিয়ে দিয়ে দে�, তব� যে� সক� পুতুলে� নাচক� থামিয়ে একটি নারীকে পূর্ণাঙ্� করতে জননী কর� তুলবেন � আর যদ� সংসারহী� করতে চা� তা� চরিত্রদে�, তব� যে� দিবারাত্রি� কবিক� চতুষ্কোণ ঘর থেকে বে� কর� বারবার ঘুরিয়ে বেড়াবে� তা� ভ্রম� পিপাসু মনকে নারী� নাভীতে, নারীদে� মনোবাসনা� দ্বারে একটা খেয়ালী প্রেমি� কর� কর� � আম� একজন মানি� পাঠিকাকে বলতে শুনেছি মানিকে� উপন্যা� তাকে বিব্রত কর�, পীড়া দে� এব� লেখককে এক� সাথে অসহ্� করতে � ভালোবাসত� উদ্বুদ্ধ কর� � হয়� শিল্পে� উন্মোচ� করার মত শীল্পিকে উন্মোচিত হত� হয় বল� তা� আয়না� পাঠক-পাঠিকারা নিজেদে� মন � শরীরে� কিছুটা দেখত� � অনুধাব� করতে পারে� বল� প্রকৃত শিল্� মানুষক� বিব্রত কর�, পীড়া দিয়ে অধিকতর খাঁট� মানু� কর� তোলে � আর সেরকমই মানি� বন্দ্যোপাধ্যায় এর উপন্যাসগুল� কখনো বিব্রত, কখনো পীড়ি�, কখনো মায়া প্রব� কর� মানুষক� পথ দেখা� আপ� আপ� জী� � প্রাণীসত্ত্বার রূপরেখাক� বুঝে উঠতে �



back to top